রণজিৎ গোপাল পান্ডে ( news bazar24) : কৃষ্ণ নাকি দেখতে খুবই সুন্দর ও মিষ্টি । কৃষ্ণের রূপে আছে এমন জ্যোতি ও মায়া যে কৃষ্ণ দর্শনে ঈশ্বর প্রদত্ব দোষও খন্ডন হয়ে যায় । কিন্তু কৃষ্ণের এই রূপের ব্যাখ্যা আমরা আর কজনই বা জানি বা জানার সুযোগ পেয়েছি। আমরা সনাতন ধর্মের কয়জন মানুষই বা ‘’ জন্মাষ্টমী’’ র অর্থ বুঝি ? আমরা কেওই ঈশ্বরের লীলা বুঝি না। সেই ক্ষমতা মনুষ্যের মধ্যে থাকে না। তবে বিভিন্ন পুঁথি ঘেঁটে যা বোঝার চেষ্টা করেছি,সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম মাত্র–
‘’ জন্মাষ্টমী–র ’’ দিনই পুণ্য লগ্নে ভগবান বিষ্ণু অবতার রূপে এই ধরাধামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাঁর নাম করণ হয়েছিলো কৃষ্ণ। আর সেই কারণেই ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর সর্বত্র খুব ধুমধামে করে দিনটি পালন হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছোটবেলায় যেভাবে তাঁর সখাদের সঙ্গে মিলে মাখন চুরি করতেন, সেই লীলাকে স্মরণ করে বহু জায়গায় ‘ মটকি ফোড় ‘ বা মাটির হাড়ি ভাঙার অনুষ্ঠান করা হয়। খালি এই নয়,সেই সঙ্গে এই বিশেষ দিনে ভগবানের পছন্দের সব জিনিস তাঁকে উৎসর্গ করা হয়। যার মধ্যে ময়ুরের পেখম, ননী বা মাখন, বাঁশি, পীতবর্ণের বস্ত্র ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা কি জানি বাঁশি আর ময়ূর পালক,সহ মাখন শ্রী কৃষ্ণের এত প্রিয় কেন ?
ময়ূর পেখম:
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মাথায় একটি ময়ূরের পালক দেখা যায়। আর সেই পালক ভগবানের স্পর্শে তা যেন আরও রঙিন হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে আরেক লেখায় উল্লেখ রয়েছে, পালক পিতা নন্দ নিজের হাতে গোপাল ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ছোটবেলায় তাঁর কেশসজ্জা করাতেন ময়ূর পালকের দ্বারা। তাই ননী গোপাল হোক বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, যে রূপেই ভগবানকে স্মরণ করা হোক না কেন, ময়ূর পালক তাঁর লীলার অঙ্গ হিসাবে আজও অধিষ্ঠিত।
ননী বা মাখন:
ভগবানের সব লীলার মধ্যে অন্যতম একটি লীলা হল মাখন চুরি। মা যশোদা সহ গ্রামের সকল নারীই মাখন তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। অন্যদিকে, সখাদের নিয়ে সেই মাখন চুরি করতেন ছোট্ট গোপাল। শুধু নিজের নয়, গ্রামের প্রায় সব বাড়ি থেকেই তিনি মাখন চুরি করতেন। ধরাও পড়তেন, মা যশোদার কাছে বকুনিও খেতেন। তবে মাখন চুরি করে খাওয়া একটুও কমেনি। আর এই লীলা থেকেই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আরেক নাম ‘মাখন চোর ‘ । আপামর ভক্তকুলও জন্মাষ্টমীতে তাঁদের স্নেহের পরশে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে মাখন বা ননী উৎসর্গ করে থাকেন।
পীতবর্ণ:
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সবথেকে প্রিয় রং হলো পীত হলুদ। তাই প্রতিটি মূর্তি এবং ছবিতে তাঁর পরিধান পিত বর্ণ বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এমনকি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে যে ধুতি গামছা দেওয়া হয় সেটাও হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।
বাঁশের বাঁশি:
কৃষ্ণের বাঁশির শব্দ শ্রবণে সেই যুগে সব পাপ দূর হয়ে যেত । খালি মানুষ নন, বনের পক্ষীকুল থেকে গ্রু ,বাছুর সকলেই মোহিত হতেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুরে। অসুস্থ গরু সুস্থ হয়ে উঠতো কৃষ্ণের বাঁশির সুরে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ খুব ছোট বেলায় এক যাযাবরের কাছ থেকে এই বাঁশি উপহার পেয়েছিলেন। বাঁশিতে সুর তোলাও শিখিয়েছিলেন সেই যাযাবর । কৃষ্ণ এই বাঁশিকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছিলেন যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি তাঁর বহু লীলার সঙ্গী হয়ে ওঠে । তাই এই বাঁশি ছাড়া যেন ভগবানকে ভাবা যায় না।
গবাদি পশু বা গরু:
বাল্যকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একজন রাখালের কাজও করেছিলেন । বাড়ির গরু গুলো চড়াতে নিয়ে যেতেন । দিনের অধিকাংশ সময় এই গবাদি প্রাণীদের সঙ্গে থাকার জন্য ভগবানের বহু লীলার গরুরাও সাক্ষী সাক্ষী হয়ে ওঠে। হরে কৃষ্ণ।