লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা ও মন্ত্র ! কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে কেন পড়া হয় পাঁচালি

news bazar24: কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোরও (Kojagari Lakshmi Puja 2022) কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে । সেই নিয়ম পুরোহিত বা বাড়ীর মহিলারা করে থাকে।  আর পুজা শেষের পর  মধ্যে অন্য়তম হল লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ। লক্ষ্মীপুজোর শেষে পাঁচালী পড়া লক্ষ্মী পুজোর একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর ফলে লক্ষ্মী দেবী অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন বলে শাস্ত্র বলে জানা গেছে।আর যে কোন  পাঁচালী বই তে দেবী লক্ষ্মীর পুজোর সব মন্ত্র লেখা থাকে। লক্ষ্মী দেবীর আহ্বান মন্ত্র পাঠ করে মায়ের ঘটে বা চরণে ফুল দিয়ে পুজো অর্চনা শুরু করুন । হাতে ফুল নিয়ে পাঁচালী পড়তে হবে। শেষে শঙ্খ বাজিয়ে মনের কামনা জানিয়ে পুজো সমাপ্ত করতে হয়।

পাঁচালী শেষে শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র :

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী।

লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা মন্ত্র :

শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন,

মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।

লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ,

বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।

হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর,

হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।

গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল,

বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।

মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়,

কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।

কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত,

সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।

সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ,

বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।

লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর,

কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।

অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান,

মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।

সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ,

দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।

রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়,

ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।

অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে,

স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।

স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার,

সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।

তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী,

সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।

স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে,

তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে।

নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা,

কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।

নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ,

অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।

শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়,

মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।

তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে,

তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।

লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে,

কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।

কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া,

দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।

মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল,

মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।

নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়,

কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।

শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি,

কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।

প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে,

করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।

নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন,

ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।

মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী,

দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।

সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে,

কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।

বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী,

কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।

পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর,

এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।

যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন,

ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।

নারায়ণী বলে শুন আমার বচন,

আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।

যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত,

আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।

গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ,

করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।

কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন,

মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।

জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা,

আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।

আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান,

সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।

ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে,

শুনিবে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে।

একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ,

সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।

ব্রত শেষে হুলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে,

এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।

দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়,

দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।

পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে,

ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।

অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা,

স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।

লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হইলো তার,

নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।

কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়,

হইল সংসার তার সুখের আলয়।

এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে,

ক্রমে প্রচারিত হলো দেশ দেশান্তরে।

করিতে যে বা দেয় উপদেশ,

লক্ষীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।

এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস,

লক্ষীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।

পুরোহিত ছাড়াই করুন লক্ষ্মী পুজা !জেনে নিন কিকি লাগবে উপকরণ