পুরোহিত ছাড়াই করুন লক্ষ্মী পুজা!জেনে নিন কিকি লাগবে উপকরণ

পুরোহিত ছাড়াই করুন লক্ষ্মী পুজা!জেনে নিন কিকি লাগবে উপকরণ

( newsbazar24)

লক্ষ্মী পূজার উপকরণ-

কোজাগরীলক্ষী পূজা সিন্দুর, অধিবাসডালা, তিল, হরিতকী, ঘট, একসরা, আতপচাউল (পরিমান মত) , ঘটচ্ছাদন গামছা ১, কুণ্ডহাঁড়ি ১, তেকাঠা ১, দর্পণ ১, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, সশীষ ডাব ১, তীর ৪, পুষ্প, দূর্ব্বা প্রভৃতি, আসনাঙ্গুরীয়ক ৩, মধুপর্কের বাটী ৩, লোহা, শঙ্খ, সিন্দূরচুবড়ি, দধি, মধু,ফুলমালা ১, চন্দ্রমালা ১,  গব্যঘৃত,নারিকেল, পান,  চিনি, নৈবেদ্য ৩, কুচা নৈবেদ্য ১,ভোগের দ্রব্যাদি, কর্পূর, চিপিটক (চিঁড়া), লক্ষীর শাড়ি (মন চাইলে) ১ টি,

মূর্তি তুলে পুজা করলে – নারায়ণের ধূতি ১, পেচক পূজার ধূতি ১, বালি, কাষ্ঠ, খোড়কে, ঘৃত এক পোয়া, হোমের বিল্ল্বপত্র ২৮, ,চানের মশলা, থালা ১, ঘটি ২, রচনা, পূর্ণপাত্র ১, দক্ষিণা।

পুরোহিত না পেলে কি করবেন? বাংলার বাইরে থেকে পূজা করলে কিভাবে করবেন ? নিজেই করে নিন মা লক্ষ্মীর পুজা –

লক্ষ্মী পূজোর প্রণালীঃ- 

১) প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায় জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোনো পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উস সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম; কেন না, তিনিই সকল প্রাণশক্তির উস। এমনক, সূর্যালোক ছাড়া শস্যও উপন্ন হবে না ! তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন। সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা

করবেন।

২) এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল- নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে দেবেন। এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হয়। এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন বা স্বস্তিকাচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও পরাতে পারেন।

এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন।

লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল

 

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-শৃণিভির্যাম্য-সৌম্যয়োঃ।

পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।

গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্।

রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

 ( অর্থঃ দক্ষিণহস্তে পাশ, অক্ষমালা এবং বামহস্তে পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপা, ত্রিলোকমাতা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণহস্তে বরদাত্রী দেবীকে ধ্যান করি।)

 মন্ত্রটি পাঠ করলে ভাল। নয়তো মা লক্ষ্মীর রূপটি চোখ বুজে, হাত জোড় করে মনে মনে খানিকক্ষণ চিন্তা করবেন।মা লক্ষ্মীর গুনের কথা, রুপের কথা,

 এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আবাহন করবেন।

আবাহন মন্ত্রটি হল

ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ

ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি

ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান

গৃহাণ।

( সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বাংলায় বলবেন, এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি আমার গৃহে স্থির হয়ে থাকো মা।)

তারপর ভাববেন, মা লক্ষ্মী আপনার হৃদয়ে এসে বসে আপনার দেওয়া ফুল- নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। একে বলে মানসপূজা।

এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি একে একে মা লক্ষ্মীকে দেবেন ৷ লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল।

এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন।

এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন। লক্ষ্মীর প্রতিমা না থাকলে ফুলে চন্দন মাখিয়ে ঘটে দেবেন।

এরপর মা লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন। শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করে দেবেন।

তারপর ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন।

 পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীঁ লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ। (শ্রীঁ উচ্চারণ হবে শ্রীং, নমঃ উচ্চারণ হবে নমহ।)

পুষ্পাঞ্জলি এক, তিন বা পাঁচ বার দিতে পারেন। পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন।তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও

ঘটে দেবেন। মা লক্ষ্মীর পেচককেও একটি ফুল দেবেন।

আপনি যদি দীক্ষিত হন, তবে এরপর আপনার গুরুমন্ত্র যথাশক্তি জপ করে মা লক্ষ্মীর বাঁ হাতের উদ্দেশ্যে জপসমর্পণ করবেন। শেষে

নিম্নোক্ত মন্ত্রে প্রণাম করবেন-

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।

সর্বতঃ পাহি মাং নিত্যং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ।।

মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বিনা মন্ত্রেই

ভক্তিভরে মা-কে প্রণাম করবেন ।

এরপর ব্রতকথা পাঠ করবেন বা শুনবেন।

এরপর বাড়িতে যে লক্ষ্মীর পাঁচালি আছে তা পাঠ করবেন ।

সবশেষে, কয়েকটি কথা অবশ্যই মনে রাখবেন-

 লক্ষ্মীপূজায় কাঁসর-ঘণ্টা বাজাতে নেই! উচ্চকিত শব্দে বিরক্ত হন দেবী।

 দিতে নেই তুলসীপাতাও।

ব্যবহার করতে নেই লোহার কোনও বাসন। কেন না, লোহা দেওয়া হয় অলক্ষ্মীকে। তাই লোহা দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ভক্তের গৃহ ত্যাগ করেন লক্ষ্মী।

মোটের উপর, ভক্তের কাছ থেকে ভক্তি ছাড়া আর কিছুই প্রার্থনা করেন না মা লক্ষ্মী। তাই একমাত্র তাঁর পূজাই মন্ত্র ছাড়া, শুধু তাঁকে স্মরণ করেই সম্ভব। সেটা মাথায় রেখেই না হয় আমরা পালন করি এই কোজাগরী পূজা!

আরও পড়ুন-

মা লক্ষ্মী কোন দ্রব্যগুলিতে বেশী খুশি হন ? কি ভাবে লক্ষ্মীকে করবেন প্রসন্ন ?