দেবী দুর্গার গায়ের রং-এর রহস্য কি? জানতে পড়ুন

newsbazar 24 ::দেবী দুর্গার গায়ের রঙ নিয়ে বিরাট রহস্য লুকিয়ে আছে সনাতন ধর্মে। সেখান থেকে জানা যায়, দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো। তবে এখানে একটা প্রশ্ন আছে , অতসী ফুলের রং বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। বেশির ভাগ জায়গাতেই দেখা গেছে এই রঙ  সোনালি। তাই  বাংলায় দুর্গা মূর্তির গায়ের রং হয় সোনালী।আবার কিছু কিছু জায়গায় অতসী ফুল নীল রঙে দেখা যায়,  সেইসব জায়গায় দুর্গামূর্তি হয় নীল রঙের। এই রং নিয়ে ঐতিহাসিকরা নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। হিন্দু শাস্ত্রে দেবীর বর্ণনায়  ‘তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভ্যাম্’ কথাটা ব্যবহার করা হয়েছে । আবার ঋগ্বেদ অনুযায়ী আদিবর্ণ, ‘লোহিতকৃষ্ণশুক্লাম্’। অগ্নি বা সূর্য হল লোহিত। জল বা বরুণ হল শ্বেত। পৃথ্বী বা পৃথিবী হল কৃষ্ণ।

আবার দেবি দুর্গার বর্ণ-মালা ত্রিবর্ণরঞ্জিত! প্রাতে  শুক্লাবর্ণা। মধ্যাহ্নে হরিদ্রাবর্ণা। সায়াহ্নে লোহিত-স্বর্ণবর্ণা! দিনের তিনটি বিভিন্ন সময়ে সূর্যের তিন  রঙ। সেই রং থেকেই ধরা হয়েছে দেবীর তিন বর্ণ! পুরানে আছে  কোচ রাজা নরনারায়ণ সংকোশ নদীর ধারে চামটা গ্রামে  ১৫৬২সালে  যে পুজোর সূচনা করেছিলেন সেই দেবীর গায়ের রং টকটকে লাল। কোচবিহারের বড়দেবী বাড়ির  দুর্গা-মূর্তির রং ও রুপ সম্পূর্নভাবেই অন্য। দুর্গা বসে আছেন বাঘের পিঠে। দেবীর রূপ  শান্ত, সৌম নয় । দশপ্রহরনধারিণী ভয়াল দর্শনা। দেবীর সংসারে লক্ষ্মী, গনেশ, কার্তিক, সরস্বতীর বদলে দুপাশে আছেন জয়া ও বিজয়া। 

  কোচবিহারের   বড়দেবীর মন্দিরে সারা বছর কোনও পুজোআচ্চা হয় না। কিন্তু সপ্তমী থেকে দশমী- বছরে চারটি দিন তাঁর দর্শন ও তাঁকে নিবেদনের সুযোগ পান সাধারণ মানুষ। পুজোর অন্যতম উপকরণ পশুবলি- পায়রা থেকে পাঠা, মোষ, শোল মাছ, শুয়োর; বলি হয় রোজ। একসময় নাকি নরবলি প্রচলিত ছিল। প্রতীকী নরবলি এখনো চালু আছে তবে সাধারণের দেখা নিষেধ।  কোচবিহার ছাড়াও নবদ্বীপের যোগনাথতলার কুমারনাথ ভট্টাচার্যর বাড়িতে ১১৭  বছর ধরে হয়ে আসছে লাল দুর্গার পুজো। তবে ভট্টাচার্য পরিবারের আদি বাড়ি ঢাকার মিতরা গ্রামেও লাল দুর্গাপুজো হত। দেশভাগের বহু আগেই ভট্টাচার্য পরিবার মিতরা থেকে যোগনাথতলায় চলে এসেছিলেন। দেশ বদল হলেও পূর্বপুরুষদের পুজো এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন, ধরে রেখেছেন লাল দুর্গামূর্তির ঐতিহ্য। 

পাশাপাশি জলপাইগুড়ি বৈকণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাও রক্তবর্ণা। হাতে থাকে শূল বা বল্লম , সেটা দিয়েই দেবী অসুরের বক্ষদেশে আঘাত করেছেন। আগে কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী কেউ থাকত না। কয়েক বছর ধরে তাদের লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আগের মতো জয়া, বিজয়া, মহাদেব, ব্রহ্মা, মেছেনিও আছেন। রায়কত পরিবারের লাল দুর্গা বাঘের ওপরই অধিষ্ঠান করেন।  ওপার বাংলাতেও লাল দুর্গা পুজোর ঐতিহ্য রয়েছে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে লাল দুর্গা পুজো হয়ে আসছে প্রায় তিনশো বছর ধরে। 

আসলে দুর্গার শতরূপের ন‍্যায়  বাংলা জুড়ে তাঁকে নিয়ে এখনো বহু সংস্কার  রয়ে গেছে।এখনও বহু রাজবাড়ি, জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয় নানা রূপে, নানা নিয়ম কানুনে। প্রতিটি বাড়ির  নিজস্ব নিয়মরীতি অনুযায়ী দুর্গাপূজা হয়। আবার দুর্গার বিভিন্ন রূপের পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে নানা ধরণের গল্প। জানা গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষ গ্রামের একটি পুজোর দুর্গার একদিক কালো আর একদিক সোনালি। এখানে কালী আর দুর্গা এক হয়ে গিয়েছে। মূর্তির কালো দিকটায় হাজার চেষ্টা করেও সোনালি রং করা যায়নি। 

 

Related Post