চড়ক পুজার সাথে জড়িয়ে আছে মালদার গম্ভীরা-শিবের গজন ! জানুন চড়ক পুজার ইতিহাস

পৌলমী গঙ্গোপাধ্যায় (news bazar24) : হিন্দু বাংলা ক্যালেন্ডার মতে, প্রতি বছর চৈত্র মাসের শেষ দিন বা চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় শিবপুজার একটি অঙ্গ চড়ক পুজো। এটি মূলত বাঙালি হিন্দু ধর্মের মানুষদের  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব।

কোথাও কোথাও নববর্ষের প্রথম দু–তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে। তবে লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবের আরাধনা এবং উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। তবে আদি পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এই উৎসব প্রচলিত ছিল।

চড়ক পুজোর ইতিহাস ঃ-

চড়ক পুজো কবে কী ভাবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও  তবে প্রচলিত রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পুজোর প্রচলন করেন। রাজ পরিবারের লোকজন এই পুজো আরম্ভ করলেও চড়কপুজো কখনও রাজ–রাজড়াদের পুজো ছিল না। এটি ছিল হিন্দু সমাজের একটি  লোকসংস্কৃতি।

 পুজোর ভক্তরা প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মের কথিত নীচু সম্প্রদায়ের লোক। তাই এই পূজায় এখনও কোনও ব্রাহ্মনের প্রয়োজন পড়ে না।

এই পূজা নীল ষষ্ঠীর পরের দিন হয় বলে অনেকে নাম নীল পূজাও বলে থাকেন। গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপুজোরই একটি অঙ্গ । আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে–মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে ' বুড়োশিব ' নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এই পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পুজোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুরির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো–বারানো বা হাজারা পুজো করা।

ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাসঃ-

চড়ক পুজোর মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। পুজোর উৎসবে নানা রকমের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার ত্রিশূল  দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনও কখনও জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে বন্ধ করলেও আগে লুকিয়ে চড়ক পুজা লুকিয়ে করা হত আর এখন প্রকাশ্যে করা হয়ে থাকে।