ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণে ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরার বিশেষ উদ্যোগ

Newsbazar24:কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের অধীন জাতীয় জল মিশনের উদ্যোগে অল ইন্ডিয়া স্টেট ওয়াটার মিনিস্টার্স কনফারেন্স আয়োজিত হয় রাজস্থানের উদয়পুরে। এই সম্মেলনে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ‘আমি এই সম্মেলনে অংশ নিতে পেরে নিজেকে খুবই গর্বিত মনে করছি। আমাদের ত্রিপুরা রাজ্য দেশের মধ্যে তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। পাহাড়ি অঞ্চল এবং ৭০ শতাংশ বনভূমি নিয়ে ১০,৪৯১ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। মূলত, এখানকার অধিকাংশ মানুষ জীবনজীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। দ্রুত প্রবাহিত নদী ও সীমিত জল সঞ্চয় করার সুযোগের কারণে রাজ্যে জল-ভিত্তিক সেচ প্রকল্পের খুব কম সুযোগ রয়েছে। তাই কৃষি ক্ষেত্রের অধিক উন্নয়ন ও কৃষকদের আর্থিক অবস্থার মানোন্নয়নে উন্নত সেচ ব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। মোট ভৌগোলিক এলাকার নিরিখে ত্রিপুরায় চাষযোগ্য জমি ২৫ শতাংশ। বর্তমানে চাষযোগ্য জমির ৪৭ শতাংশে সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা কয়েক বছরের মধ্যে চাষযোগ্য জমিতে ৮০ শতাংশ সেচের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জলের জন্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা, ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ করা ইত্যাদি ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়েছে সরকার। আমরা ৯৮টি ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা চিহ্নিত করেছি, যা ৩০ হাজার হেক্টর জমিকে শেষের আওতায় আনবে এজন্য ১৪টি প্রকল্প চলছে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ২০১৯ সালে জল জীবন মিশন (জেজেএম) এর সূচনা করার সময় শুধু ২৪,০০০ গ্রামীণ পরিবারে (৩.২৬%) নলের মাধ্যমে জলের সংযোগ ছিল। আর ২০২৫-এর ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬.৩৮ লক্ষ পরিবারে (৮৫%) নলের জলের সরবরাহ সুনিশ্চিত হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা রয়েছে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় উৎস-সহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী জল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ত্রিপুরা ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার। দীর্ঘ বর্ষাকাল ও বিস্তৃত বনাঞ্চল থাকায় আমাদের রাজ্যে প্রচুর ভূগর্ভস্থ জলের সংস্থান রয়েছে। আমরা জাতীয় গড়ের তুলনায় ভূগর্ভস্থ জলের মাত্র ৯.৪৮% ব্যবহার করি। সেচ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা ও পানীয়জলের সমস্যা নিরসনে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনে জোর দেওয়া হয়েছে। জল শক্তি অভিযান সূচনা হওয়ার পর থেকে বৃষ্টির জল ধরে রাখা, বার্ষিক নিষ্কাশনযোগ্য ভূগর্ভস্থ জলের সম্পদ ২০২৩ সালে ১.০৬৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ১.১৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার হয়েছে। রাজ্য সরকার জল সংরক্ষণ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, পুরনো জলাশয় সংস্কার, ওয়াটারশেড উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জল শক্তি অভিযানের অধীনে ৪৫,০০০-এরও অধিক জলের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের ৮টি জেলায় ৯৭৫টি অমৃত সরোবর এবং ১৪শ শতকের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জলের কাঠামো পুনর্জীবিত করা হয়েছে।