পৌষ পার্বণের আগে মাটির সরা বানাতে চূড়ান্ত ব্যস্ততা মৃৎশিল্পীদের

Newsbazar24:বাঙ্গালীর বারো মাসের তেরো পার্বণের অন্যতম পার্বণ হল পৌষ পার্বণ।তাই শীতের শুরুতে নতুন ধানের নবান্ন, পৌষের শীতে নানাধরনের পিঠে তৈরি আজ আর প্রতি ঘরে ঘরে দেখা যায় না। শহরঞ্চল থেকে এ জিনিস প্রায় উঠে গেছে বলতেই হয়, কারণ শহরের মানুষের বানাবার সময় কোথায় তাই তারা কিনে খায়। কিন্তু শহরের মতো গ্রামবাংলায় এখনও পিঠেপুলি, পাটিসাপটা কিনে খাওয়ার প্রচলন নেই। সেখানে অন্তত পৌষ সংক্রান্তি ও তার আগে-পরে কয়েকটা দিন পিঠেপুলি তৈরি হয়। আর পিঠেপুলি তৈরি করতে গেলে প্রয়োজন হয় মাটির সরার।
উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলা সাথেও দুই দিনাজপুর জেলার মানুষেরাও মাতেন পৌষ পার্বণ উৎসবে। অতিরিক্ত কিছু রোজগারের আশায় প্রতিবারের মতো এবারও রকমারি মাটির সরা তৈরি করতে মৃত্‍ শিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। কয়েকদিন ধরেই চরম ব্যস্ততায় নাওয়া-খাওয়া প্রায় ভুলেই গিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মৃত্‍ শিল্পীরা।
পূর্বে পৌষ পার্বণ উত্‍সবকে কেন্দ্র করে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ঠাকুরমা, মাসিমা, দিদিমারা প্রতি বছর শীত পড়তেই ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া তৈরি করে রৌদ্রে শুকিয়ে তা কৌটোযাত করতেন। আর পৌষ পার্বণের দিনে দুপুর হতে না হতেই চালের গুঁড়োর সাথে চিনি অথবা নলেন গুড় অর্থাত্‍ খেজুরের গুড় মিশিয়ে পিঠে পুলি তৈরির উপকরণ তৈরি করে ফেলতেন। পৌষ সংক্রান্তির দিন সন্ধে হতেই গৃহস্থ বাড়িতে শুরু হয়ে যেত রকমারী পিঠে পুলি বানানোর কাজ। এই পিঠে পুলি তৈরি করতে প্রয়োজন মাটির তৈরি সরা।

দক্ষিণ দিনাজপুরের এক মৃৎশিল্পীর কথায়, শীতের শৈত্য প্রবাহকে উপেক্ষা করে এঁটেল মাটির সাথে প্রয়োজন মতো জল মিশিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে সেই মাটিকে মাখিয়ে সরা তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর নরম মাটিকে সাঁচে ফেলে বিভিন্ন আকৃতির সরা তৈরি করা হয়। কোনও সরার নাম এক খুঁটির সরা আবার কোনটা সাত খুঁটির সরা। প্রতিটি সরার জন্য একটি করে মাটির ঢাকনাও তৈরি করেন মৃত্‍শিল্পীরা। চলতি ভাষায় এটি ঢাকন নামে পরিচিত।এরপর সেই সরাগুলিকে রৌদ্রে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। তারপর সেগুলিকে একটি একটি করে বাছাই করে তা পাইকারি ও খুচরো হিসেবে বিক্রি করা হয়। আকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের সরা সহ ঢাকনার দামও বিভিন্ন রকম হয়। উত্তর দিনাজপুরের মৃত্‍ শিল্পী লক্ষ্মী পাল, কল্পনা পালরা জানান, শীতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সরা, ঢাকন তৈরি করলেও এখন আর আগের মত সরা-ঢাকনের চাহিদা নেই। দরও সেরকম ভাবে পাওয়া যায় না।কারণ বর্তমানে শীতের দিনগুলিতে হাটে-বাজারে পিঠে-পুলি বিক্রি হয়।