নবদ্বীপের বিভিন্ন মঠ মন্দিরে মহাসমারোহে পালিত হলো অন্নকূট মহোৎসব

Newsbazar24:বাংলার অতি প্রাচীন জনপদ,মন্দির নগরী নবদ্বীপ ধাম।
সারা বিশ্বের মানুষের কাছে যা ভিন্ন ভিন্ন নামেও পরিচিত,মন্দির নগরী, চৈতন্য নগরী, এমনকি নবদ্বীপকে গুপ্ত বৃন্দাবনও বলা হয়ে থাকে।মোটের ওপর এক বৈচিত্র্যময়, ঐতিহ্য বাহী ধর্মিয় স্থান এই নবদ্বীপ ধাম।
আর এই শহরে সকল উৎসব অনুষ্ঠানেও থাকে বৈচিত্র্য, থাকে ঐতিহ্য, যা ধর্মীয় ঐতিহ্য সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পরিনত হয়।

সকল অনুষ্ঠানের মতন অন্নকূট মহোৎসব অনুষ্ঠানে সামিল হতে সকাল থেকেই নবদ্বীপ শহরের বিভিন্ন মঠ মন্দিরে দেখ যায় অসংখ্য ভক্ত সমাগম। শুধু মঠ মন্দির নয় শহরের অসংখ্য বাড়িতে পারিবারিক অনুষ্ঠানের মাধ্যম পালিত হয় এই অন্নকূট মহোৎসব।

শহরের বিভিন্ন মঠ মন্দিরের পাশাপাশি শহরের গানতলাস্থিত বলদেব জিউ মন্দিরে মহাসমারোহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হলো এই অন্নকূট মহোৎসব অনুষ্ঠান।
ইতিহাসে জানা যায়, বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জের বুতুনি ছেড়ে নবদ্বীপে চলে আসেন প্রভু নিত্যানন্দের তৎকালীন একাদশ পুরুষ প্রাণগোপাল গোস্বামী। পরবর্তী সময়ে নবদ্বীপে আসেন ওই বংশের অন্য এক জ্ঞাতি রেবতীমোহন গোস্বামী।
সেই সময় নবদ্বীপ শহরের গানতলায় গড়ে ওঠে বলদেব জিউ মন্দির, ও ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডে মদনমোহন মন্দির।
গানতলা বলদেব জিউ মন্দিরের সেবাইত কিশোর গোস্বামী জানান প্রতি বছর প্রথা মেনে এই অন্নকূট মহোৎসব পালিত হয়, আর এই অনুষ্ঠানে সামিল হতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য ভক্ত সমাগমও ঘটে।
অন্নকূট মহোৎসব কি? কিভাবে অনুষ্ঠানের প্রচলন বা নবদ্বীপেই বা কেন পালিত হয় এই অনুষ্ঠান? প্রশ্নের উত্তরে কিশোর গোস্বামী জানান এটা মূলত বৃন্দাবনের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান, জানা যায় বৃন্দাবনের ব্রজবাসীরা একটা সময় ইন্দ্রদেবের পুজোর উদ্যোগী হয়, সে সময় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ব্রজবাসীদের বলেন তোমরা বৃন্দাবনে থেকে ইন্দ্র দেবের পুজো কেন করছো, বরং তোমরা গিরিবাজ গোবর্ধনের পুজো করো, কারন হিসেবে তিনি বলেন গিরিরাজ গোবর্ধনের পাদদেশে গো- মাতারা পালিত ও লালিত হয়, যার ঘাস খেয়ে গো মাতারা দুদ্ধ দেয়, তাই তোমরা গিরিবাজ গোবর্ধনকে পুজো করো, আলাদা করে ইন্দ্র দেবের পুজো করার দরকার নেই। আর এই খবর ইন্দ্র দেবের কানে যেতেই তিনি রাগে ক্রোধে ফেটে পরে ও ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রবল বৃষ্টি শুরু করে যার ফলে গোটা ব্রজপুরি ভেসে যায়,আর এই বিপর্যয় থেকে ব্রজবাসিকে রক্ষা করতে শ্রী কৃষ্ণ নিজের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে করে গিরিরাজ গোবর্ধন পর্বতকে তুলে তার নিচে সমস্ত ব্রজবাসীকে আশ্রয় দেয়। তার পর থেকেই এই অন্নকূট মহোৎসব অনুষ্ঠানের সূচনা হয়! অন্ন মানে ভাত কূট এর অর্থ হলো পর্বত, অর্থাৎ অন্ন দিয়ে পর্বতের তথা গিরিরাজের অবয়ব তৈরী করে গিরিরাজকে স্মরণ করে পুজো করা হয়, গিরিরাজই হলো সাক্ষাত গোবিন্দ!
এ দিন দুপুরে মন্দির প্রাঙ্গনে অন্ন দিয়ে গিরিরাজের অবয়ব তৈরী করে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়, সাথে ছিলো পঞ্চ ব্যাঞ্জন, বিভিন্ন রকমারি সব্জি, চাটনি, পায়েস, কয়েক রকমের মিষ্টি, ফল সহ বিভিন্ন উপকরণ সাজিয়ে এই বিশেষ পুজো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুজো শেষে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
বংশপরম্পরায় রাধারানীকেই সর্বলক্ষ্মীময়ী, রূপে পুজো করা হয় এবছরও তাই করা হয়েছে,বছর ভর রাধারাণী কে রাধারাণী রূপেই পুজো করা হয়৷ এই দিনটি সকল নিয়ম নিষ্ঠা মেনে সর্বলক্ষ্মীময়ী রূপে পুজো করা হয়, এটা কয়েকশো বছরের পুরোনো রীতি,আমরা সেটাকেই অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছি।
এ ছাড়াও এই রাধারানী কে ঘিরে দীপাবলি, পঞ্চম দোলেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেমন দীপাবলিতে ১১০৮ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশেষ পুজাআর্চনা সহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করা হয়, তবে এখানে নিত্যানন্দ বংশের দুই শরিক আছি, আর এই রাধারানীকে পালা করে আমরা তার পুজো বা সেবা কার্য করে থাকি, যখন যে মন্দিরে এই রাধারানী থাকেন এই বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠান সেই মন্দিরে হয়ে থাকে।
সব মিলিয়ে শনিবার ঘরে ঘরে যখন স্বয়ং লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি বা পট পুজিত হলো, তখনই শহরের প্রায় মধ্যস্থল গানতলায় বলদেব জিউ মন্দিরে রাধারানী পুজিত হলেন স্বয়ং সর্বলক্ষ্মীময়ী রূপে যার সাক্ষি থাকলো সমগ্র মন্দির নগরী।