Malda:পরিবারের চার সদস্যকে নির্মম হত্যা ছোট ছেলের, হাড়হিম হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির সাজা আদালতের

Newsbazar24:: বিগত ২০২১ সালের মালদহের কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের পুরনো ১৬ মাইল এলাকার এক হাড় হিম করা খুনের ঘটনা গোটা রাজ্য সহ দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। নিজের পরিবারের বাবা-মা, বোন এবং ঠাকুমাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পরিবারের ছোট ছেলে মোহাম্মদ আসিফ। নির্মীয়মান বাড়ির একটি গুদাম ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল ওই চারজনের মৃতদেহ।
সৌভাগ্যক্রমে ভাইয়ের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যায় বড় ছেলে। সে বেশ কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর কালিয়াচক থানায় ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই নির্মীয়মান বাড়িতে হানা দিয়ে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এবং অভিযুক্ত ছোট ছেলে আসিফকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ চার বছর মামলা চলার পর মালদা জেলা আদালতের বিচারক এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। নিজের বাবা, মা, বোন এবং ঠাকুরমাকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত যুবক মহম্মদ আসীফকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে আদালত। আদালত এই গোটা ঘটনাকে ‘বীভৎস’ বলে উল্লেখ করেছে রায়ে।
এই মামলায় পুলিশি তদন্তে একের পর এক রহস্য উন্মোচিত হতে থাকে। পুলিশি জেরায় সে জানায়, এই খুনের পরিকল্পনায় সে ডার্ক ওয়েবেরও ব্যবহার করেছিল। ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে সে বাড়ির পাঁচ সদস্যকে অজ্ঞান করে দেয় ।প্রত্যেককে টেনে নিয়ে যায় পাশে নির্মীয়মান গুদামঘরে । সেখানে কাঠের কফিনে এক এক করে সকলকে শুইয়ে ছেড়ে দেয় জলের কল । জলে ডুবে মৃত্যু হয় বাবা জাওয়াদ আলি, মা ইরা বিবি, বোন আরিফা খাতুন, ঠাকুমা আলেকজান বিবির । সৌভাগ্যক্রমে দাদা আরিফের জ্ঞান ফিরে আসে । ভাইয়ের সঙ্গে একরকম মারামারি করে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান। । পরিবারের চার সদস্যকে খুন করার পর বাড়িতেই ছিল আসিফ।
ঘটনার প্রায় তিন মাস পরে তার দাদা কালিয়াচক থানায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।
খুনের পর আসিফ চারটি দেহ ওই গুদামঘরেই পুঁতে দেয় । বাড়ির আশেপাশে নজরদারি চালাতে গোটা বাড়ি মুড়ে ফেলেছিল সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে । তার ঘর থেকে একাধিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেটও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
শুক্রবার দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর বিচারক মহম্মদ আসীফকে দোষী সাব্যস্ত করেন। শনিবার মামলার মালদহ জেলা আদালতের জেলা মুখ্য দায়রা বিচরক শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্ত আসিফকে ফাঁসির সাজা শোনান এবং গোটা ঘটনাকে ‘বীভৎস’ বলে আখ্যা দেয় এবং আসীফকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায়।
এদিন আসীফের পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী মহম্মদ নাসের আলি জানিয়েছেন, ‘আদালত ফাঁসির সাজা দিয়েছে। তবে এই রায়ের ভিত্তিতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
বিচার শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তিনটি ধারায় অভিযুক্তকে দোষী সব্যস্ত করা হয়েছিল । তার মধ্যে ২০১ ধারায় প্রমাণ লোপাট, বড় ভাইকে খুনের চেষ্টা করার জন্য ৩০৭ ধারা এবং পরিবারের চার সদস্যকে খুনের জন্য ৩০২ ধারায় আসিফ মহম্মদকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক দোষীকে ২০১ ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন । জরিমানা অনাদায়ে দু’মাসের কারাদণ্ড দেন। ৩০৭ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন । জরিমানা অনাদায়ে দু’মাসের কারাদণ্ড এবং ৩০২ ধারায় আসিফ মহম্মদকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন ।”
তিনি আরও বলেন, ”এই ঘটনাকে বিচারক বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে উল্লেখ করেছেন । এই মামলায় মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে । সম্পত্তি হাতানোর জন্যই খুনের এই পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়েছে