Malda News:প্রকাশ্যে চলছে জুয়ার মেলা, খেলছেন মহিলা ও পুরুষ, পাহারায় পুলিশ, অদ্ভুত দৃশ্য মালদহে

Newsbazar 24::রাজ্যের প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ এই মেলাকে নিয়ে বহু মানুষের কাছে নানান ধরনের গল্প শোনা যায়। শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলে প্রকাশ্যে জুয়ার আসর। পরিবারের নবীন এবং প্রবীণ ৮ থেকে ৮০ সকলেই এই জুয়ার আসরে শামিল হন। টাকা-পয়সার লেনদেন জুয়া খেলার মাধ্যমে হয়ে থাকে। শুধু পুরুষরা নয়, এই মেলায় অংশ নেন বাড়ির মেয়ে-বউরাও।
এ এক আজব মেলা৷ মেলায় ফুচকা-জিলিপি-পাঁপড়ভাজা, খেলনা ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে জুয়ার বোর্ড। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে জুয়াড়ি মেলা। এ মেলায় জুয়া খেলা হয়ে আসছে কয়েকশ বছর ধরে। এ জুয়াড়ি মেলায় সামিল হন মহিলারাও। মালদহে একদিনের জন্য এ মেলা বসে, চলে রাত পর্যন্ত। এ মেলায় গরিব বড়লোকের কোন পার্থক্য থাকে না৷ পুরাতন মালদার বাসিন্দারা এই মেলার সাক্ষী কয়েক প্রজন্ম ধরে৷
মূলা ষষ্ঠী উপলক্ষে মঙ্গলবার পুরাতন মালদহ পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের মোকাতিপুর এলাকায় বেহুলা নদী সংলগ্ন মাঠে বসেছিল জুয়ার মেলা।
তবে এই মেলার আরও একটি নাম রয়েছে। তা হল লেউড়ি মেলা। শুধুমাত্র এই মেলাতেই চিনি দিয়ে তৈরি একধরনের চকোলেটের মত তৈরি হয়। তার নাম লেউড়ি।
এই মেলার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রাচীনকালে মনসামঙ্গল কাব্যে এর উল্লেখ পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।
প্রবীনদের একাংশের মতে,এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। এলাকার একপাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বেহুলা নদী। সেই সময় নিজেদের সন্তান সন্ততিদের সুখ কামনায় ষষ্ঠীপুজো করতেন পুরাতন মালদহের মহিলারা। জঙ্গলে শ্বপদ জন্তুদের হাত থেকে তাঁদের রক্ষার জন্য সঙ্গে যেতেন স্বামীরাও। দিনভর চলত এই পুজো। মহিলারা পুজোতে ব্যস্ত থাকলেও স্বামীদের কোনও কাজ থাকত না। ফলে সময় কাটাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে জুয়া খেলতেন। এই ভাবেই এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে যায় জুয়াখেলা। মেলার নাম হয়ে যায় জুয়াড়ি মেলা।
আর একাংশের কথায়, মোকাতিপুর এলাকায় বিধবাদের সংখ্যা সবথেকে বেশি। বেহুলার অভিশাপে এলাকায় বিধবাদের সংখ্যা বাড়ছে। এমনই ধারণা তাদের। কথিত রয়েছে, বেহুলা যখন তার সাপের কামড়ে মৃত স্বামী লখিন্দরকে নিয়ে নদীতে কলার ভেলায় ভেসে যাচ্ছিলেন, তখন মোকাতিপুর এলাকার নদীপাড়ে কিছু বিবাহিত মহিলা তা দেখে বিদ্রুপ করেছিলেন, তখন বেহুলা অভিশাপ দিয়েছিলেন। সেই জন্যই এলাকায় বিধবার সংখ্যা সবথেকে বেশি বলে স্থানীয় মানুষদের ধারণা।
তবে মোকতিপুর মেলা কমিটির এক প্রবীণ সদস্য বলেন , বেহুলার এ অভিশাপের সময় নদীর পারে কিছু মানুষ ‘পাশা’ খেলছিলেন। তারা বেহুলার কথায় নদীপাড়ে থাকা ওই মহিলাদের তাড়িয়ে দেন। তাতেই বেহুলা খুশি হয়ে বলেছিলেন, বছরে একবার অন্তত মানুষ এই নদীপারে ভিড় করবে পাশা খেলার জন্য। সেই আমলের ‘পাশা’ খেলাই পরবর্তীকালে জুয়ায খেলায় পরিণত হয়েছে । তাই প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই জুয়ার মেলা হয়ে আসছে এখানে।
ধর্ম, প্রথা, ঐতিহ্য মেনেই এ জুয়ার মেলা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। এ মেলায় পুরুষদের থেকে মহিলারাই বেশি ভিড় করেন জুয়া খেলার জন্য।এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ বিগত দুই বছর করোনার জন্য মেলা সেভাবে না জমলেও এবার কিন্তু এই মেলাকে ঘিরে পুরুষ মহিলা সকলের মধ্যেই আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
বর্তমানে মেলা কমিটির এক সদস্য জানান শুধু মালদা কিংবা রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে নয়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমনকি অসম থেকেও অনেকে এই জুয়ার মেলায় আসেন জুয়া খেলার মজা নিতে।
*মালদহ থেকে কার্তিক পালের প্রতিবেদন*