Newsbazar 24:চিকিৎসায় গাফিলতি ও রোগীর সাথে দুর্ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ বেসরকারি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে।মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে সদ্যোজাত শিশুসন্তান।সঠিক পরিকাঠামো এবং পরিষেবা সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে গিয়ে রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের। এমনকি খবর সংগ্রহ করতে বাধাদান সাংবাদিকদের।প্রশাসনের কাছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের রোগীর পরিবারের।
নার্সিংহোমের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রোগীর পরিবার সহ এলাকার সাধারণ মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার সামসির মতিগঞ্জ এলাকার সমাজসেবা নার্সিংহোমে। গত বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পারো গ্রামের মৌসুমী বেগম প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে ঐ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়। রাতে তার সিজার হয় ওই নার্সিংহোমে।একটি শিশু কন্যার জন্ম হয়।কিন্তু সদ্যজাতর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় পরিবারের লোকেরা তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবার জন্য আবেদন করে। কারণ ওই নার্সিংহোমে চিকিৎসার কোন সঠিক পরিষেবা ছিল না। কিন্তু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সেই সদ্যোজাতকে ছাড়তে চাইছিল না। এদিকে ওই দিন রাতেই অন্য এক সদ্যোজাত শিশু সন্তানের মৃত্যু হয় জন্মের পরেই। সেই দেখে কার্যত জোর করে মৌসুমী বেগমের স্বামী নাসিম আখতার তার সদ্যোজাত শিশু কন্যাকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে এই মুহূর্তে ওই শিশু কন্যা গুরুতর অসুস্থ । এদিকে মৌসুমি বেগম তার ছোট্ট মেয়েকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে।মৌসুমী বেগম নার্সিংহোমেই ভর্তি ছিল।তাকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে বিল মিটিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের লোকেরা এলে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে নার্সিংহোমের মালিক আনারুল হক। এমনকি মৌসুমি বেগমকে নার্সিংহোম থেকে খাওয়ার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। নার্সিংহোমের ভূমিকায় সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগড়ে দেন মৌসুমী বেগম এবং তার পরিবারের লোকেরা। সমাজসেবা নার্সিংহোমে খবর করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয় সংবাদ মাধ্যম। ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত করা হয় সাংবাদিকদের। এদিকে সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর দাবি ব্যাঙের ছাতার মতন চারিদিকে গজিয়ে উঠেছে এই ধরনের নার্সিংহোম।যাদের নেই সঠিক কোন পরিকাঠামো। শুধুমাত্র মানুষের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে টাকার জন্য ব্যবসা করে এই ধরনের নার্সিংহোমগুলো। স্বাস্থ্য দপ্তর কেন এই ধরনের নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে নার্সিংহোম গুলিতে রোগী ভর্তির জন্য সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্র। মৌসুমী বেগমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে তারা এই নার্সিংহোমের কথা জানতো না। এক অ্যাম্বুলেন্স চালক চাঁচল পার করে তাদের এই নার্সিংহোমে নিয়ে আসে।যেখানে চাঁচলে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং একাধিক নার্সিংহোম রয়েছে।যদিও সমগ্র ঘটনায় কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি সমাজসেবা নার্সিংহোমের মালিক আনারুল হক।
মৌসুমী বেগম বলেন, আমার মেয়েটা এখন খুব অসুস্থ। ওরা সঠিক সময়ে ছেড়ে দিলে এমন হতো না। আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। আমাকে খাওয়ার দেয়নি। এদের এখানে কোন সঠিক পরিকাঠামো নেই।
মৌসুমী বেগমের স্বামী নাসিম আখতার বলেন, আমার মেয়ে জন্ম নেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে গেছিল। এখানে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় আমি মালদায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ছাড়তে চাইনি। আমি জোর করে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছি। আমার মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখানে আমার স্ত্রীর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে।
তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের মালদা জেলার সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, মমতা ব্যানার্জির আমলে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামো ভালো। মালদায় মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে চাঁচলে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল রয়েছে। মানুষের উচিত সরকারি হাসপাতালে যাওয়া।
জেলা বিজেপি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক রতন দাস বলেন, সরকারি হাসপাতালের বেহাল দশা। মানুষ বাধ্য হয়ে বেসরকারি নার্সিংহোমে যাচ্ছে। সেখানে প্রচুর টাকা নিলেও মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছে না। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। এই সরকার ইচ্ছা করে সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো ঠিক করছে না। কারণ এই ধরনের নার্সিংহোমগুলো থেকে এরা কাটমানি পাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, পরিকাটামো এবং পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন এই ধরনের নার্সিংহোম খোলার অনুমতি দিচ্ছে। একটি নার্সিংহোম খোলার সময় কেন সঠিক ভাবে তাদের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হচ্ছে না।