news bazar24 : আর মাত্র কয়েকদিন পরই শক্তির আরাধনায় মেতে উঠবে বাংলা। আর সেই কারনেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই কালীপুজো খুবই ধুমধাম করে পালন করা হয়। তবে এই কালীকে দীপান্বিতা কালী নামেই বলা হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, যে কোনও পুজো ঘিরেই বহু পৌরাণিক বা লৌকিক গল্প প্রচলিত থাকে। তেমনই পৌরাণিক গল্প রয়েছে কালীকে ঘিরেও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা কালীর স্বপ্ন আদেশ পাওয়ার পরই পুজো শুরু হয় পূজা । তবে বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই কালী কোথাও শ্মশান কালী, কোথাও ডাকাত কালী আবার কোথাও শ্যামা মা হিসেবেই পরিচিত। আদ্যাপীঠ হোক কিংবা ত্রিপুরেশ্বরী সকলে পুজো পান কালী হিসেবেই। তবে বেশিরভাগ মন্দিরেই যে কালীমূর্তি আমরা দেখি তা কিন্তু দক্ষিণাকালীর।
কথিত আছে, রামপ্রসাদ সেনের গুরু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বপ্নে আদেশ পান কালীর প্রসন্ন ভাবমূর্তি রচনা করার। স্বপ্নে দেবী তাকে জানান পরবর্তী ভোরে যে নারীকে তিনি সর্বপ্রথম দেখবেন তার রূপ অনুযায়ী কালীর এক প্রসন্ন প্রতিমূর্তি তৈরী করতে। পরবর্তী ভোরে যে নারীকে প্রথম সে দেখেন তিনি কৃষ্ণবর্ণা, তার ডান পা সামনে, উন্মুক্ত কালো কেশ এবং বাম হাত উত্তোলনের দ্বারা দেয়ালে গোবর স্থাপন করছেন। আকস্মিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে সামনে দেখে সেই মহিলা খুব লজ্জা পেলেন এবং তার জিহ্বা বার করে দাঁত দিয়ে চাপলেন। সেই নারীর রূপ অনুসরণ করে আগমবাগীশ মহাশয় কালীর মূর্তিতত্ত্ব অনুযায়ী দক্ষিণা কালীর মূর্তি রচনা করেছিলেন। উল্লেখ্য, এর আগে কিন্তু কালী যন্ত্রে কালীপূজা হতো।
দক্ষিণা কালীর ডান পা শিবের বুকে থাকে । তিনি কালীর অন্যান্য রূপ থেকে ভিন্ন এবং তাকে ঘর এবং মন্দিরে পূজা করা হয়। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তার বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ; দক্ষিণকরযুগলে বর ও অভয় মুদ্রা। তার গাত্রবর্ণ গভীর নীল, আকাশ এবং নীল সমুদ্রের ন্যায়; তিনি দিগম্বরী। তার গলায় মুণ্ডমালার হার; কর্ণে দুই শবরূপী কর্ণাবতংস; কটিদেশে নরহস্তের কটিবাস। তার দন্ত উজ্জ্বল শ্বেতবর্ণ; ; তিনি ত্রিনয়নী এবং মহাদেব শিবের বুকে দণ্ডায়মান। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা । তার, দীর্ঘ এবং কালো চুল সভ্যতা থেকে প্রকৃতির স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে। দক্ষিণা কালীর তৃতীয় চক্ষুর নিচে সূর্য, চন্দ্র এবং অগ্নির প্রতীক দেখা যায় এবং এটি প্রকৃতির চালিকা শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। ( kali puja 2023 )
উল্লেখ্য, দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে যে কালীর পুজো করা হয় তিনি দক্ষিণা কালী। কালীঘাট, তারাপীঠে যে কালীর পুজো হয় মূলত তাঁরাও দক্ষিণা কালী হিসেবেই পুজো পান।
রাস্তায় দুরকম কালীমূর্তি দেখতে পাইঃ-
পশ্চিম বঙ্গে কালীপুজোর আগে আমরা রাস্তায় দুরকম কালীমূর্তি দেখতে পাই। একজনের গাত্রবর্ণ কালো, অন্যজনের তুঁতে। মূলত কালো ও নীলের মাঝে যে কালীর গাত্রবজ্ঞণ তা শ্যামাকালী নামে পরিচিত। এই মূর্তি তুলনায় অনেক কম দেখা যায়।
দশমহাবিদ্যার অন্যতম এই দেবীর ভয়ঙ্করী রূপটিকে খানিকটা নরম করে দেখাতেই হয়তো এক সময় তাঁর গাত্রবর্ণ নীল রঙের দেখানোর প্রচলন শুরু হয়েছিল, সাহিত্য এবং শ্যামাসঙ্গীতেও তাঁর শ্যামা রূপটির উল্লেখ মেলে।
শ্যামা কালী
পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো হলেও কোনও বলি হয় না। পুরোপুরি বৈষ্ণব মতেই পুজো হয়। এই কালীকে ঘরের মেয়ে হিসেবেই পুজো করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণাকালী পুজো পান মা রূপেই।