Share on whatsapp
Share on twitter
Share on facebook
Share on email
Share on telegram
Share on linkedin

ভূত চতুর্দশীর দিন বাংলার ঘরে ঘরে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয় কেন? জানুন বিস্তারিত

Share on whatsapp
Share on facebook
Share on twitter
Share on email
Share on telegram
Share on linkedin

নিউজ বাজার২৪ ঃ    দীপান্বিতা কালী পূজার সাথে এই ভূত চতুর্দশীর অনেক পুরনো সম্পর্ক রয়েছে, এই দিনে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি ১৪ ধরনের শাক খাওয়ার প্রথা রয়েছে।

অনেকের মতে, দীপান্বিতা কালী পূজার আগের রাতে ‘ভূত চতুর্দশী’ বা নরক চতুর্দশী হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে বাংলার প্রতিটি ঘরে ১৪টি শাক ও ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং ১৪টি পুরুষকে উৎসর্গ করা হয়।

ভূত চতুর্দশীতে কেন ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয় ?

ভূত চতুর্দশীতে যখন চারিদিকে অন্ধকার থাকে তখন ঘরকে আলোকিত করতে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো হয়। কিন্তু এই দিনে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং ১৪ জন পুরুষকে উৎসর্গ করা হয়। হিন্দু বাঙালি ধর্মে ভূত চতুর্দশীর দিন বিকেলে চৌদ্দ ধরনের সবজি খেয়ে সন্ধ্যায় ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা প্রচলিত।

১৪ পুরুষ এর উদ্দেশ্যে প্রদীপ উৎসর্গ:

বংশের ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে এই প্রদীপ গুলি উৎসর্গ করা হয়। সেই ১৪ পুরুষ হলেন:-

১) পিতা, ২) পিতামহ, ৩) প্রপিতামহ, ৪) পিতামহী, ৫) প্রপিতামহী, ৬) মাতামহ, ৭) প্রমাতামহ, ৮) বৃদ্ধ প্রমাতামহ, ৯) মাতা, ১০) মাতামহী, ১১) প্রমাতামহী ও ১২) বৃদ্ধ প্রমাতামহী তার সাথে ১৩) শ্বশুর ১৪) শাশুড়ি।

এর পাশাপাশি অশুভ শক্তি, অশুভ আত্মা দের হাত থেকে বাঁচতে ভূত চতুর্দশীর দিনে যে মন্ত্র জপ করা হয়, তার ফলে অশুভ আত্মার ভয় কেটে যায় সম্পূর্ণরূপে।

পৌরাণিক কাহিনী: পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত রাজা বলি ও তার অনুসারীরা এই মর্ত্যে পুজো নিতে আসেন। চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যার অন্ধকারে রাজা বলির অনুসারীরা যাতে পথ ভুলে বাড়িতে ঢুকে না পড়েন, তার জন্য পথ দেখানোর উদ্দেশ্যে এই প্রদীপ জ্বালানো হতো। আবার আরো একটি প্রচলিত কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, পিতৃপক্ষের সময় পিতৃপুরুষদের মর্ত্যে আগমন হয়। তারপর এই চতুর্দশী তিথিতেই শুরু হয় তাদের আবার ফিরে যাওয়ার পালা। সেই সময় যাতে অন্ধকার পথ তাদের বিভ্রান্ত না করে, সেই জন্য তাদের উদ্দেশ্যে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়, যার ফলে তাদের যাওয়ার রাস্তা আলোকিত হতে পারে।

১৪ জন যমরাজ এর উদ্দেশ্যে তর্পণ: আবার অন্যদিকে এই ভূত চতুর্দশীকে যম চতুর্দশীও বলা হয়। এই দিনে ১৪ যন এর উদ্দেশ্যে তর্পনের রীতি প্রচলিত রয়েছে অনেক যুগ আগে থেকে। এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরী যে, মহালয়ার সময় যমদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয় না। আর এই ১৪ জন যমরাজ হলেন: ১) মৃত্যু, ২) ধর্মরাজ, ৩) অন্তক, ৪) বৈবস্বত, ৫) কাল, ৬) সর্বভুক্ষয়, ৭) উড়ুম্বর, ৮) যম, ৯) নীন, ১০) দধ্ন, ১১) বৃকোদর, ১২) চিত্রগুপ্ত, ১৩) চিত্র ও ১৪) পরমেষ্ঠী।
পদ্মপুরাণ অনুসারে জানা যায় যে, এই ভূত চতুর্দশী তিথিতে গঙ্গা স্নান করলে নরক দর্শনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। স্বর্গ লাভ সম্ভব হয়

চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বালানোর তাৎপর্য: এখানে ভূত কথার অর্থ হলো “অতীত” এই দিন পরিবারের চৌদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ভূত চতুর্দশী কিন্তু বাঙ্গালীদের কাছে বিশেষ এক পার্বণ। মহালয়া তে যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়, আর এই দিন কিন্তু চৌদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এই দিন ঘর-বাড়ি, উঠান এবং বাড়ির সর্বত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়। ভূত অর্থাৎ অতীত এবং চতুর্দশী অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের ১৪ তম দিন পিতৃ এবং মাতৃকুলের ৭ পুরুষের উদ্দেশ্যে বাতি প্রদান করা হয়, অর্থাৎ প্রদীপ জ্বালানো হয়। পুরান মতে এই তিথিতে মহাকালী ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে শুরু করেন। অশুভ শক্তির বিনাশের পূর্বক্ষণ হলো এই ভূত চতুর্দশী। শাস্ত্র অনুসারে এই দিন ঘি এর প্রদীপ জ্বালানো উচিত, কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সে ক্ষেত্রে তেলের প্রদীপ ব্যবহার করা হয়। দীপাবলি উপলক্ষে যেমন অন্ধকার ঘুঁচে গিয়ে আলোর বন্যায় ভেসে যায় চারিদিক, তেমনি এই ভূত চতুর্দশীর বিশেষ দিনে আত্মা প্রেতাত্মারও বিনাশ ঘটে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আজও প্রতিটি বাঙালি ঘরে ভূত চতুর্দশীতে ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। আলাদা করে রাখা হয় এই প্রদীপগুলি, একসাথে জ্বালিয়ে দিতে হয়। বিশ্বাস অনুসারে হেমন্তের রাতে এভাবে উত্তরসূরীর কাছে আলো দেখেন স্বর্গবাসী চোদ্দপুরুষ, তাঁদের স্মরণ করার ঋতু হলো এটি। তাই এই সময়ে সন্ধ্যা হলে দূরের আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে জ্বলে ওঠে আকাশ প্রদীপও। কালী পূজা প্রতিটি বাঙালি পরিবারে এক আলোর উৎসব হলেও এই পূজাতে বিভিন্ন ধরনের রীতি নীতি মেনে তবেই কাটাতে হয় এই আনন্দের দিনগুলি। মোট পাঁচ দিন ধরে চলে কালীপূজার এই অনুষ্ঠান। তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচার, রীতি-নীতি মানতে হয় তার ফলে সংসারে আসে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আর সমস্ত নেগেটিভ শক্তি দূর হয়ে গিয়ে পজিটিভ শক্তির আগমন ঘটে। যেটা আমাদের সকলের জীবনে খুবই প্রয়োজনীয়। ১৪ টি প্রদীপের সাথে ছোটবেলার স্মৃতি: ছোটবেলায় এই দিনগুলি সকলেই খুবই আনন্দের সাথে কাটিয়েছেন। ১৪ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হবে ভূত চতুর্দশীর দিন, তবে কেন ১৪ টি প্রদীপ একসাথে জ্বালাতে হবে সেটা জানার আগ্রহ তখন কারও মধ্যেই ছিল না। শুধুমাত্র অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত করে তোলার জন্য চারিপাশটা, আনন্দের সীমা ছিল না। বর্তমানে এখন অনেক কিছুই উন্নতির দিকে গিয়েছে, তবে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ছিল অনেক বেশি মধুর, নিজের হাতে নরম মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো মাটির প্রদীপ, কালী পূজার অনেক আগে থেকে। কেননা সেগুলি তৈরি করে আবার সুন্দর করে রোদে শুকাতে হবে যে। পরিবারের সাথে একসাথে প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালিয়ে দীপাবলীর আনন্দ উপভোগ করার মজাই ছিল আলাদা।

 

Share on whatsapp
Share on facebook
Share on twitter
Share on email
Share on telegram
Share on linkedin

সম্পর্কিত খবর