Share on whatsapp
Share on twitter
Share on facebook
Share on email
Share on telegram
Share on linkedin

এনালগের যুগে কেমন ছিলো গ্রাম বাংলার পুজো ? জেনে নিন সেকালের গ্রাম বাংলার দুর্গাপুজার কাহিনী

Share on whatsapp
Share on facebook
Share on twitter
Share on email
Share on telegram
Share on linkedin

news bazar24: যুগ বদলেছে। সময় এগিয়েছে। হ্যাচাকের আলো থেকে এল ই ডি আলোতে গ্রামের রাস্তা সেজেছে। তাই গ্রামের পুজোর আন্তরিকতায় অনেকটাই ম্লান হয়েছে। কারণ গ্রামবাংলার পুজোর যে জাঁকজমক এককালে ছিল, সেই আড়ম্বর আয়োজনে আজ কেমন যেন মলিনতার আচ্ছাদন পরেছে। বৈভব, রাজকীয়তা, আভিজাত্যের আবরণে মোড়া গ্রামের জমিদার বাড়ি এবং রাজবাড়িতেই পুজো হত, যা আজও বংশ পরম্পরায় কিছু পরিবার রক্ষা করার চেষ্টা করে চললেও সেই পুজো গুলোতেও আধুনিকতার ছাপ পরতে শুরু করেছে।

আসুন জেনে নিন সেকালের গ্রাম বাংলার দুর্গাপুজার কাহিনী

শহরে পাড়়ায় পাড়ায় দুর্গাপুজো হওয়ার চল শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার আগেই। কিন্তু  গ্রামগঞ্জের পুজো বলতে জমিদার বাড়ি এবং রাজবাড়িই ভরসা ছিল।

 একটা গ্রাম থেকে আরেকটা গ্রামে মানুষ পায়ে হেঁটে কিংবা গরুর গাড়ি চেপে ঠাকুর দেখতে যেত। জমিদার বাড়িতে । আলোর কেরামতি বলতে মানুষ জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ির ঝালরের আলোর শোভা বুঝত।বেশির ভাগ রাজবাড়িতে থাকতো হ্যাচাকের আলো ।  

প্রতিমা বলতে  গ্রামের বাধাধরা কুমোরের হাতে মায়ের মৃন্ময়ী রূপ ফুঁটে উঠত। মাঠে কাশ ফুলের শোভাতে এবং দীঘির জলের পদ্মফুলের সঙ্গে প্রজাপতির খেলা দেখে ছেলে মেয়েদের হল্লা করা কিংবা ভোর হলেই শিউলি কুড়িয়ে ঠাকুরদালানে পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে গ্রামের আকাশ বাতাসে ভাসত মায়ের আগমনীর সুর।

মহালয়ার ভোরে রেদিওতে মহালয়া শোনা শেষ হলেই  শয়ে শয়ে মানুষ ভিড় করত জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরে মায়ের চক্ষুদান দেখার জন্য। 

পুজো শুরু হওয়ার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই গাঁয়ের পথে দেখা মিলত বহুরূপীর। কখনও হর পার্বতী, কখনও লক্ষ্মীগনেশ, কখনও ব্রক্ষ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর রূপে দেখা মিলত তাদের। পুতুল নাচ আর জাদুকরের দেখাও মিলত পুজোর মেলাতে বাইস্কোপ দেখতে ভিড় জমাতো কচি কাচারা। আর এই সব  ছাড়া আজকাল বড় শূণ্য হয়ে উঠেছে গ্রামের পুজো।  

পুজো মানেই গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে কাদামাটি আর রঙের প্রলেপ পড়বেই। দেওয়াল নিকানো, ঘরের কালিঝুলি পরিস্কার করা, নতুন নতুন কাপড় চোপড় নামিয়ে ভালো করে ক্ষার দিয়ে পরিস্কার করে রাখার মত প্রথা আজ খুব একটা দেখা যায় না। গ্রামেও এখন সবই নিয়ম রক্ষার জন্য করা হয়ে থাকে।

সাধারণতঃ একচচালা ঠাকুর বেশি দেখা যেত। মা দুগ্গার সংসার এক ছাদের তলায় চারটে দিন মহানন্দে থাকতেন। কোন কোন গ্রামে আবার ঘট পেতে পুজো করা হত। মস্ত বড় দালান, চওড়া উঠোন, নীল রঙের চাঁদোয়া ঘেরা সামিয়ানা, ঢাকির বাদ্যি, ধুনোর গন্ধ, উজ্জ্বল ঝাড়লন্ঠনের বাহারের মাঝেও অবাক চোখে শিশুরা অপেক্ষায় থাকত কখন পুজো শেষ হবে। কারণ এরপরই প্রসাদ মিলবে যে

গ্রামবাংলার পুজোতে খাবারের আয়োজন ছিল দেখার মত। কাঁঠালি কলা, বাতাবি লেবু, শশা,আপেল, নারকেল, চার থেকে পাঁচ সের ওজনের পঞ্চান্ন, গ্রামোফনের মত দেখতে তেলে ভাজা, জিলিপি, রসে ডোবানো চমচম, রসগোল্লা, রাবড়ি, মিষ্টি দই থাকত প্রসাদে। এরপর দরিদ্র এবং কাঙালি ভোজনের রেওয়াজ ছিল পুজো বাড়িতে। পাঁঠার মাংস, পোলাও, মাছের নানান রকম পদ, নানান রকম সবজী সহযোগে ডাল, সাত রকমের ভাজা দিয়ে ভরে থাকত পুজো বাড়ির রান্নাঘর। 

কম করে পঞ্চাশ গ্রামের লোক খেয়ে যেত এক একটি পুজো বাড়ি থেকে, তাও তিনদিনের জন্য। শুধু দরিদ্র নয়, বাড়ির দাস দাসীরা, ব্রাক্ষ্ণণ, কায়স্থ, শুদ্রদের জন্য থাকত চিড়ামুড়ি এবং পঞ্চান্নের ব্যবস্থাও। যা এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। অধিকাংশ জমিদার বাড়ির পুজো এখন বারোয়ারী পুজোয় পরিনত হয়ে গেছে। নাম মাত্রই জমিদার বাড়ির পুজো।

 

Share on whatsapp
Share on facebook
Share on twitter
Share on email
Share on telegram
Share on linkedin

সম্পর্কিত খবর