newsbazar 24 ::গ্রাম বাংলার পুজো পর্যালোচনা করতে গিয়ে আজ আপনাদের দেবী দুর্গার দ্বিভূজা রূপের কথা জানাব ।
চন্ডী মঙ্গল মহাকাব্য থেকে আমরা জানতে পারি সকল দেবতার শক্তি নিঃশেষিত হয়ে যে সম্মিলিত প্রতিমূর্তি গড়ে উঠেছে, তিনিই দেবী দুর্গা।এই জন্যই এই দেবীর রূপও নানাবিধ।কোথাও তিনি দশভুজা, কোথাও বা ষোড়শভুজা, কোথাও বা তাঁকে স্তুতি করা হয়েছে অষ্টাদশভুজা এবং সহস্রভুজারূপেও!
কিন্তু দ্বিভুজা দেবী দুর্গা? হ্যা দ্বিভুজা দনুজদলনীও তেমনই এই বঙ্গেরই এক গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী। পশ্চিম মেদিনীপুরের ভাসানপুকুর গ্রাম। পিংলা থেকে অদূরে এই ভাসানপুকুরেই তিনটি পরিবারে দ্বিভুজা দেবী দুর্গা পূজিত হন। এবার পুজোয় চলুন ভাসানপুকুর। শহর থেকে দূরে নিরালায় দুর্গাপুজোর এমন সাবেকি আমেজ মেলা ভার!
ভাসানপুকুরের পালবাড়িতে দুর্গা দ্বিভুজা তো বটেই! পাশাপাশি তাঁর রূপটি অভয়ার! অর্থাৎ এই বাড়ির প্রতিমায় দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র নেই! বরং, তাঁর সৌম্য, স্নিগ্ধ বঙ্গলক্ষ্মী রূপেরই জয়জয়কার এই পুজোয়। কথিত আছে প্রায় পাঁচশো বছর আগে হুগলির কৃপারাম পাল ভাসানপুকুরে ভদ্রাসন পাতেন। তখন থেকেই শুরু হয় এই অভয়া পূজা। আগে পুজোয় মোষ বলি হলেও এখন পাঁঠা বলি হয়। এছাড়া এই পুজোর আরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এই পুজোয় চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের বণিকখণ্ড গান করা হয়।
এছাড়া ভাসানপুকুরের জিতনারায়ণ পালের বাড়ির দুর্গাপ্রতিমাও দ্বিভুজা। তার সঙ্গেই চোখ টানবে কালীতলার লালপাকাতে চৌধুরি বাড়ির পুজো। এখানেও দেবী পুজো পান দ্বিভুজা রূপে।
ভাসানপুকুরের এই তিন দ্বিভুজা দুর্গা যেন বা মহালক্ষ্মী, মহাকালী, মহাসরস্বতীর ত্রিবিধ রূপেরই বহির্প্রকাশ! যুগের পর যুগ গিয়েছে, সময়ের চাকা ঘুরেছে নিজের নিয়মে। যাঁরা পত্তন করেছিলেন এই তিন বাড়িতে দ্বিভুজা দেবীপূজা, কালের নিয়মে বিলীন হয়েছেন দেবীপাদপদ্মেই।
কিন্তু, দেবী তাঁদের পূজার অধিকার ছেড়ে কোথাও থিতু হননি। ভক্তকে রক্ষা করতে আজও তিনি স্বমহিমায় অচলা ভাসানপুকুরে।