newsbazar24 : যে কোন সংক্রান্তি শব্দের অর্থ অন্যত্র গমন বা ভিন্নরূপে অন্যত্র গমন। আগামী ১৪ ই জানুয়ারি শেষ হচ্ছে বাংলার পৌষ মাস। ১৪ তারিখ পৌষ সংক্রান্তি। এরপরে মাঘ মার শুরু। এই বিশেষ মুহূর্তে সূর্য ধনু রাশি ত্যাগ করে প্রবেশ করেন মকর রাশিতে। আর তখন শুরু হয় সূর্যের উত্তরায়ন। সূর্যের আলোতে প্রাণ ফিরে পায় রুক্ষ কঠিন ধরা৷ তাই পৌষ মাসের শেষ দিন পালিত হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি।
আবার অনেকের মতে উত্তুরে হাওয়ার দাপটে যখন সমগ্র জীবকুল শীতে কেঁপে ওঠে তখনই পৌষ সংক্রান্তি আসে।তাই আগেকার মানুষেরা বলতেন পৌষ সংক্রান্তির না গেলে ঠান্ডা কমবে না। আর এমনটাই অনেক মানুষের বিশ্বাস।
যদিও কেন তারা এমন বিশ্বাস করেন? মকর সংক্রান্তির মধ্যেই রয়েছে সেই ব্যাখ্যা।তবে এই দিনটিকে যুগ যুগ ধরে পবিত্র দিন হিসেবে মেনে আসা হচ্ছে।
সূর্য স্থির ও সর্ব শক্তিমান৷ পৃথিবী তার চারিদিকে ঘুরছে। তাহলে সূর্যের কিভাবে উত্তর দিকে যাওয়া সম্ভব?
২৩ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ভূগোলের সংজ্ঞায় জলবিষুব বলা হয় ,এদিন থেকে উত্তর গোলার্ধ এর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে পৃথিবীর৷
কর্কটক্রান্তি রেখার সীমানা পেরিয়ে সূর্য মকরক্রান্তি রেখার দিকে’ ঢলে পড়ে। সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয়৷ তাই আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমে যায়, আর শীতের আমেজ শুরু হয়।
ফলে সূর্যের প্রখর তাপ না থাকায় গ্রীষ্মের দাহদাহ থেকে মুক্তি পায় মানুষ। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ায় তখন গরম শুরু হয়। পৌষ মাসের শেষ দিন মানেই বঙ্গজীবনে উষ্ণতা বৃদ্ধির সূচনা। পৃথিবীর উত্তরায়ণ শেষ হলে দিন বড় হতে থাকে ছোট হতে থাকে রাত।মকর সংক্রান্তি চলে যাওয়া মানেই বিজ্ঞানের ভাষায় সূর্যের উত্তরায়ন শুরু৷
মকর সংক্রান্তির পৌরাণিক ব্যাখ্যা কি আছে ?
মকর সংক্রান্তির পৌরাণিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। সূর্য এই লগ্নে তার ছেলে মকর অধিপতি শনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের মিলনের দিন হিসেবে পালন করা হয়। আবার মহাভারতে ভীষ্মের শরশয্যা সঙ্গে মকর সংক্রান্তির সম্পর্ক রয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীষ্ম শরশয্যা শুয়েছিলেন৷ পিতা শান্তনু থেকে পাওয়া স্বেচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন। কিন্তু তাও মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন কারণ সেই সময় ছিল সূর্যের দক্ষিণায়ন।
দক্ষিণায়ন কে তুলনা করা হয় রাতের সঙ্গে। রাতের বেলা সবাই যেমন বিশ্রাম করে তেমনি স্বর্গের দেবতারা টানা ছয় মাস বিশ্রাম নেন৷ ওই সময় যদি ভীষ্ম স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করতেন তাহলে তাকে স্বর্গের দরজায় দাঁড়িয়ে দেবতাদের ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করতে হত।
কথিত রয়েছে সূর্যের দক্ষিণায়ন এর সময় প্রাণত্যাগ করলে পুনর্জন্ম হয়৷ আর উত্তরায়নের মৃত্যু মানে পৃথিবী থেকে চির মুক্তি। তাই ভীষ্ম অপেক্ষা করেছিলেন সূর্যের উত্তরায়ন এর জন্য। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মকর সংক্রান্তির পূন্য লগ্নে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। অন্যদিকে সূর্যের উত্তরায়ন শুরু হল খুলে গেল স্বর্গের দ্বার। ঘুম ভাঙলো দেবতাদের। তাই কর্কট সংক্রান্তি অপেক্ষা মকর সংক্রান্তি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এক কথায় -
মকর সংক্রান্তির দিন পুণ্যস্নান করে সূর্যকে পুজো করাই এই পরবের মূল উপাচার। সূর্যদেবের ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করাকেই মকর সংক্রান্তি বলা হয়।
মকর সংক্রান্তির দিনটি অত্যন্ত শুভ। এই দিনটিতেই মল মাস শেষ হয়। ফলে, মকর সংক্রান্তি থেকেই শুভ কাজ শুরু করা হয়।
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী, মকর সংক্রা ন্তির দিন পবিত্র কোনও নদীতে স্নান করে কিছু দান করলে পু্ণ্য অর্জন করা যায়। তবে, মকর সংক্রান্তিতে একটি ভুল করলে তার ফল ভোগ করতে হতে পারে। যেহেতু এই দিন সূর্যকে পুজো করা হয়, তাই এই পবিত্র দিনে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সূর্যের উদ্দেশে জল নিবেদন করা উচিত।
মকর সংক্রান্তির দিন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা উচিত নয়। এমন ভুল করলে সূর্যের রোষে পড়ে বিভিন্ন রকম হয়রানির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এমনকী কুণ্ডলীতে সূর্যের দোষ বেড়ে যেতে পারে এবং জীবনে খারাপ সময়ের মধ্যে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়।
Post your comments about this news