২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিলো সুপ্রিম কোর্ট ! কি জানালো আদালত

newsbazar24 : ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিলো সুপ্রিম কোর্ট । প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে বলে দিলো যে কারচুপি হয়েছে। কোনওভাবেই যোগ্য এবং অযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে, হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ করারও কোনও প্রয়োজন নেই।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

১. সুপ্রিম কোর্ট ২৬,০০০ নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করেছে।

২. একটি সম্পূর্ণ নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়া হবে, যা তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

৩. এই তিন মাসের মধ্যে যারা যোগ্য তারা যে বিভাগে কাজ করছিলেন সেখানেই কাজ চালিয়ে যাবেন। তারা তিন মাস বেতনও পাবেন।
কিন্তু কারা যোগ্য বা অযোগ্য?
উল্লেখ্য যে কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই অযোগ্যদের তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে । যারা ফাঁকা ও এমআর শিট জমা দিয়েছেন তাদের নামের একটি তালিকা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও, আরও অনেকে অযোগ্য হতে পারেন, তাদের নির্বাচন এখনও সম্পন্ন হয়নি। এই আদেশ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর। যদি বিস্তারিত নির্দেশনা না আসে, তাহলে এই ‘নতুন নির্বাচন’-এ কারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন, কোন ভিত্তিতে তা নির্ধারণ করা হবে তা স্পষ্ট নয়।

শুধুমাত্র একজনকে চাকরিতে বহাল রাখা হবে

সুপ্রিম কোর্ট কেবলমাত্র একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা দাস নামে একজন প্রার্থী তার চাকরি বহাল রাখবেন। তার চাকরি বহাল রাখার আদেশ কেবল তার জন্যই প্রযোজ্য।

‘যাদের বেতন ফেরত দিতে হবে ‘

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ২৬,০০০ চাকরি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের পর, সকলেই ভেবেছিলেন যে মানবিক কারণে বেতন ফেরত দেওয়ার আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও সেই আদেশ বহাল রেখেছে। বেতনের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত।” কিন্তু কাকে? সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বেতনের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই তাদের তিনটি বিভাগে ভাগ করেছে। যারা খালি ওএমআর শিট জমা দিয়েছেন তাদের নামের তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। তাদের ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে যে বেতন পেয়েছেন, তা ১২ শতাংশ সুদের হারে ফেরত দিতে হবে। তারা নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উপস্থিত হতে পারবেন না।

যোগ্য-অযোগ্য এখনও স্পষ্ট নয়

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ হল, এত বড় প্যারামিটারে অনিয়ম ‘সংশোধনের বাইরে’, অর্থাৎ কোনওভাবেই নির্বাচন করা সম্ভব নয়। অতএব, পুরো প্যানেলটি বাতিল করা হয়েছে। ‘প্রতিবন্ধীতার কারণে’ একজন ব্যক্তির দায়ের করা আবেদনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ও সুপ্রিম কোর্ট বহাল রেখেছে। তার চাকরি অক্ষত থাকবে।

ফ্রেশ সিলেকশন প্রসেসে’ কারা কারা বসতে পারবেন ?

অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরা ছাড়া ২০১৬ সালে যারা আবেদন করেছিলেন, তারা নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে বলেছে যে যেহেতু পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে, তাই চূড়ান্তভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু নতুন করে নির্বাচন করতে কতক্ষণ সময় লাগবে?

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, “রাজ্য সরকার চাইলে যেকোনো সময় নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রয়োজন নেই।” আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের আবেদন গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

নতুন করে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বসার বয়স সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করলে কী হবে?

আজ একজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দাখিল করেছেন, যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রমকারীদের বয়স কিছুটা শিথিল করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। তাদের আরেকটি সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছে। তা গৃহীত হয়েছে কি না, আদেশের কপি প্রকাশ পেলেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানা যাবে।

মামলার পটভূমি

২০১৬ সালের এসএসসির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলার শুনানি শেষে ২০১৬ সালের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। ফলস্বরূপ, ২৫,৭৫৩ জন চাকরি হারিয়েছিলেন। এসএসসি কর্তৃক ২৬,০০০ চাকরি বাতিলের এই মামলায় বেশ কয়েকটি জটিলতা ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল যোগ্য এবং অযোগ্য নির্বাচনের সমস্যা।