newsbazar24 : দোল বা হোলি নিয়ে গোটা বিশ্বে আলাদা আলাদা রীতি ও নিয়ম আছে। কোথাও একদিন এই অনুষ্ঠান পালন করা হয় তো কোথাও আবার পাঁচ দিন ধরে। এই পশ্চিম বঙ্গেরই কলকাতা সহ আসে পাশের জেলা গুলিতে পূর্ণিমার দিনই হোলি খেলা হয়ে যায়। আবার উত্তর বঙ্গের মালদা সহ বিভিন্ন জেলায় দোল পূর্ণিমার দিনটিকে ঠাকুরকে উৎসর্গ করা হয়। এদিন ঠাকুরের চরণে আবির দেওয়া হয় এবং পরের দিন মানুষ নিজেদের মধ্যে রং আবির দিয়ে হোলি উৎসব পালন করে থাকে। এখানেই অনেকএর কৌতূহল থেকে যায় দোল আর হোলির মধ্যে পার্থক্য ? তাই জেনে নিন দোল বা হোলি উৎসব কি ?
হিন্দু ধর্ম অনুসারে চারটি যুগ আছে -সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ এবং কলিযুগ । বর্তমানে সময়ে চলছে কলিযুগ । এর আগের যুগ অর্থাৎ দ্বাপরযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা বা দোল উৎসব ভগবান শ্রী কৃষ্ণের হাত ধরে চলে আসছে । অনেকের মতে ১৪৮৬ সালের এই দোল পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেন । শ্রী গৌর সুন্দর হলেন কলি যুগের মানুষদের পথপ্রদর্শক । কলির অধঃপতিত জীবদের করুনা করতে তিনি আবির্ভূত হলেন শ্রীধাম নবদ্বীপে । সেই কারণে এই দিনটিকে গৌর পূর্ণিমা হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
দোল পূর্ণিমাকে গৌর পূর্ণিমা বলা হয় কেন ?
কিন্তু সবাইকে অবাক করে তিনি বেছে নিলেন ইংরেজি ১৪৮৬ সালের ফাল্গুন মাসের এই পুর্নিমা তিথি তথা দোল পুর্নিমার এই পুন্য তিথিকে । আনন্দ উৎসবে এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন । আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হচ্ছে ঐদিন সন্ধ্যায় মহাপ্রভুর আবির্ভাবের সময় হঠাৎ করে চন্দ্র গ্রহণ শুরু হয়ে যায় । অর্থাৎ পূর্ণিমার মাঝে চন্দ্র গ্রহণ । যাকে বলা হয় eclipse of full moon যা জোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল একটি সন্ধিক্ষণ । শত বছরে এক দুইবার খুবই অল্প সময়ের জন্য এই সন্ধিক্ষণগুলো আসে । তাই মহাপ্রভুর জন্মের এই সময়কে বলা হয় Auspicious সময় । এই রহস্যময় সময়েই দিক বিদিক আলো করে উলুধ্বনি আর শঙ্খনাদের গর্জনে শচীমাতা আর জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে আবির্ভূত হলেন শ্রীম্মন মহাপ্রভু দোলের আগের দিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে কেউ কেউ তাতেও মেতে ওঠেন ৷ যা হোলিকাদহন বা নেড়াপোড়া নামে পরিচিত । সাধারণ উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয় ।
হোলি শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে ?
এদিকে স্কন্দপুরাণ অনুসারে ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান কথা শোনা যায় । হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর ভগিনী । ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন । এদিকে তাঁরই পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত । প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে নিজের পিতার উপরে স্থান দেওয়ায় ক্রুদ্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু তাঁর নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেন । দাদার আজ্ঞায় হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে প্রবেশ করেছিলেন কারণ তার বর ছিল আগুণে প্রবেশ করলেও তিনি অক্ষত থাকবেন । কিন্তু সেই বরের ক্ষেত্রে
কিছু দাবি রাখা হয়েছিল , হোলিকাকে একাকী হাসি মুখে আগুণে ঝাঁপ দিতে হবে ৷ কিন্তু সেই দাবি বা শর্ত ভুলে যখন প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে ঝাঁপ দেয তখন নারায়ণের কৃপায় প্রহ্লাদ এর কোন ক্ষতি না হলেও আগুনে পুড়ে হোলিকারই মৃত্যু হয় । সেই হোলিকার মৃত্যুর কাহিনিকে ভিত্তি করে দোলের আগের দিনে হোলিকাদহন বা ভইরা পোড়ানো উৎসব পালন করা হয় ।