মহরম কি? এর পেছনে ইতিহাস কি রয়েছে আসুন জেনে নেওয়া যাক

Newsbazar24: আজ মহরম। মহরম ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি বছরের প্রথম মাস। বিশ্ব ব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা নবী মুহাম্মদের নাতি এবং হযরত আলীর পুত্র ইমাম হোসেনের শাহাদাতে শোক প্রকাশ করেন এই দিন।
‘মুহররম’ শব্দটি আরবি যার অর্থ পবিত্র,সম্মানিত।
প্রাচীনকাল থেকে মহররম মাস পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। মহরমের ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদার দিন যাকে আশুরা বলা হয়ে থাকে।
১৪৪৫ বছর আগে হযরত মুহাম্মদ ও তার অনুগামীরা মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওই দিনটি ছিল মহরমের প্রথম দিন। তাকে মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে বাধা দেওয়া হয়। মহরমের দশম দিনটি অশুরা হিসেবে পালন করা হয়। এদিন ইমাম হুসেনের শোক পালন করা হয়। তিনি ৬৮০ খ্রিস্টপূর্বে কারবালার যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করেন। ইসলামের অন্যান্য উৎসব থেকে মহরমের আলাদা কারণ এই মাসটি হলো শোক জ্ঞাপন ও প্রার্থনার মাস।এসময় কোন উৎসব পালিত হয় না। শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য এই মাসটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। শিয়ারা এদিন শৃংখল তৈরি করে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করেন। একে তদবির বলা হয়। আবার সুন্নিরা উপবাস পালন করেন ও ‘ইয়া হোসেন’ ও ‘ইয়া আলী’ উচ্চারণ করেন। মুসলিমদের অনেকেই আশুরা বা মহরমের দিন রোজা রাখেন। অনেকেই আগের দিন ও পরের দিনেও রোজা পালন করেন। মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে রমজান মাস চালুর আগে আশুরার দিন রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল
ইসলামের ইতিহাসে এই মাসের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২, এর মধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত’। হাদিসে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলা হয়েছে । মহানবীর হিজরতের বছরকে প্রথম বছর ধরে হজরত উমর এর খিলাফতকালে ইসলামি সন গণনার সূচনা হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় বিধিবিধান ও ইবাদত–বন্দেগি চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আরবি তারিখ চর্চায় রাখার জন্য হিজরি নববর্ষ উদ্‌যাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিজরি নববর্ষ উদ্‌যাপন প্রিয় নবীজি –এর হিজরতের বিরহ–বিচ্ছেদ যন্ত্রণাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, নবীপ্রেমে উজ্জীবিত করে। আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনে নুহ এর প্লাবন সমাপ্ত হয়। এদিন ইব্রাহিম জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ৪০ দিন পর নিরাপদে মুক্তি পান। এদিন ইউনুস মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। এই দিনে আইয়ুব রোগমুক্তি লাভ করেন। এই দিনে সুলায়মান তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এই দিনে ইয়াকুব হারানো পুত্র ইউসুফ কে ৪০ বছর পর ফিরে পান। এই দিনে ঈসা জন্মগ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
আশুরার দিনে আরও বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল।তথাকথিত শিক্ষিত ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ নামাজ পাঠ, কোরান পাঠ, দরিদ্র অসহায়দের দান দক্ষিণার মধ্যে দিয়ে নীরব শ্রদ্ধা পালন করে থাকেন। অন্যরা এদিন তাজিয়া বের করে থাকেন।