নীল পূজা বা নীল ষষ্ঠী কি ? কি আছে নীল ষষ্ঠীর ইতিহাস ? কবে আছে এই বছরে নীল ষষ্ঠী ?

news bazar24: নীল পূজা বা নীল ষষ্ঠী হল একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি লোক উৎসব, যা মূলত নীল-নীলাবতী নামে তথা শিব পার্বতীর একটি বিবাহ উৎসব বলে অনেকে বলে থাকে ।

মুলত হিন্দু বাঙালিদের এটি একটি ধর্মীয় উৎসব । চৈত্র সংক্রান্তির চরক উৎসবের আগের দিন নীল পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত, বাঙালি মহিলারা তাদের কন্যা বা পুত্রদের মঙ্গল কামনা করে এবং তাদের সুস্থ জীবনের কামনা করে নীল ষষ্ঠী উপবাস পালন করেন।

নীল ষষ্ঠীর পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি, অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিন। পরের দিনটি পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। বাঙালি ঘরের সকল মায়েরা তাদের সন্তানদের সুখ, সৌভাগ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে এই উপবাস পালন করেন।

বাঙালার লোককথা অনুসারে, নীল সন্ন্যাসী এবং শিব-দুর্গা সংঘ নীলকে সাজিয়ে পূজার সময় বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে মানুষের ঘরে ঘরে যান। তারা ঘরে ঘরে দান সামগ্রী সংগ্রহ করেন। নীলের এই গানকে অষ্টক গান বলা হয়।
সেই সন্ধ্যায়, শিশুদের মায়েরা প্রদীপ জ্বালান এবং তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য শিবের পূজা করেন এবং সারা দিনের পর উপবাস ভাঙেন।

সারাদিন ধরে তারা কোনও খাবার বা পানীয় গ্রহণ করে না। সারাদিন উপবাসের পর, মায়েরা সন্ধ্যায় ভগবান মহাদেবের পূজা এবং তাঁর প্রসাদ ভোজন করে উপবাস ভাঙেন। এই বছর, ১৩ এপ্রিল, রবিবার নীলষষ্টির উপবাস পালিত হচ্ছে। মায়েরা নীলের পূজা করে তাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনা করেন।

অনেক জায়গায় আবার, নীম বা বেল কাঠ দিয়ে নীল মূর্তি তৈরি করা হয়। নীল পূজার আগের দিন, অজু করা হয়। গভীর রাতে, দেবতাদের হাজরা পূজা করা হয়, অর্থাৎ বিবাহ উপলক্ষে সমস্ত দেবতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়াও, হাজরা পূজার সময়, শিবের শিষ্যদের বা ভূত ও আত্মার দেবতাকে পোড়া মাছ উৎসর্গ করা হয়। পরের দিন, নীল পূজার সময়, নীলকে গঙ্গার জলে স্নান করানো হয় এবং একটি নতুন লাল শাল পরানো হয়। তবে, নীলকে কমপক্ষে সাতটি বাড়িতে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

নীল ষষ্ঠীর পৌরাণিক কাহিনী

বহু বছর আগে, এক বামন এবং এক বামনের পাঁচ ছেলে এবং দুই মেয়ে ছিল। এই দম্পতি পূজার মাধ্যমে তাদের জীবনযাপন করেছিলেন। কিন্তু এত পূজা এবং উপবাসের পরেও, তাদের সমস্ত সন্তান একে একে মারা যায়। একের পর এক সন্তান হারানোর পর, বামুনি ঠাকুর দেবতার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। সন্তানের শোকে তারা সেই স্থানে থাকতে অস্বীকার করেন।

বামুনি এবং বামুনি তাদের দুঃখে সবকিছু ছেড়ে কাশীবাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করার পর, তারা দুজনেই অন্নপূর্ণার পূজা করেন এবং মণিকর্ণিকা ঘাটে বসেন। সেই সময়, দেবী ষষ্ঠী বৃদ্ধ বামনের ছদ্মবেশে বসে থাকার কারণ জানতে চান।

তখন বামুনি বললেন, “আমি আমার সমস্ত সন্তানকে হারিয়েছি। আমাদের সমস্ত পূজা বৃথা গেছে। সবই দুর্ভাগ্য। ঠাকুর দেবতা বলে কিছু নেই।” ষষ্ঠীবুড়ি বললেন, “বারব্রত নিষ্ফল হয় না মা, ধম্মকম্ম যাই কর ঈশ্বরে বিশ্বাস থাকা চাই। তুমি ষষ্ঠীকে মানো? তুমি কি ষষ্ঠীকে অনুসরণ করো? তুমি কি কখনও তাঁর পূজা করেছ? তিনি তোমার সন্তানদের যত্ন নেন।” বামুনি বললেন, “আমি এতদিন ধরে সমস্ত ষষ্ঠী পালন করে আসছি, কিন্তু এখনও আমার ছেলেরা বেঁচে নেই।”

ষষ্ঠীবুড়ি বললেন, “তুমি কি কখনও নীলষষ্ঠীর পূজা করেছ? চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন উপবাস করে শিবের পূজা করো। শিবের মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাও এবং পরে জল পান করো। তোমার সন্তানদের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করো।” বামুনি সেই উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মাতৃত্ব ফিরে পান।

নীল ষষ্ঠী ২০২৫ পূজার সময়

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে নীল পূজা এই বছর ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ রবিবার পালিত হবে। প্রতিপদ পড়বে রবিবার ভোর ৫:৫২ মিনিটে।
আগামীকাল সকাল ৯:৩২ মিনিটের মধ্যে নীলকণ্ঠ শিবের পূজা করুন।