news bazar24 ঃ পাথরের কি কান আছে ? পাথর কি নিজের থেকে চলাফেরা করতে পারে ? ভূগোল কিন্তু বলছে হ্যাঁ, আছে । তবে অবশ্য সে পাথর কিন্তু সাধারণ দেশি পাথর নয়! বিদেশি এক ধরনের পাথর । রোমানিয়ায় প্রত্যন্ত গ্রাম কোসটেসতিতে এখনও দেখা যায় এমনই অভিনব বিস্ময়কর এক পাথরের।
যেকোনো জীবের মতোই এই পাথরের আয়তন বৃদ্ধি পায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। পাথরের এই অদ্ভুত বৈশিষ্টের জন্য রোমানিয়ার এই বিশেষ পাথরকে জীবন্ত পাথর বলে থাকে ।
যদিও বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটির নাম ‘ট্রোভান্ট’। ১৯৯০ সালের কথা জিওলজিস্ট জি. এম. মার্গোকি প্রথম এই পাথরটির কথা বর্ণনা করেন তাঁর ‘দ্য টার্সিয়ারি ইন ওল্টেনিয়া’ গ্রন্থে। ‘ট্রোভান্ট’ নামটি তাঁরই দেওয়া।
তবে অনেকের মতে ট্রোভান্ট নামটি ১৯৯০ সালে নামকরণ হলেও , বহুযুগ আগে থেকেই রোমানিয়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাথর সম্পর্কে সচেতন । তারা মনে করে পাথরের দৈবিক ক্ষমতার জন্যই এই পাথর চলাফেরা করে।
তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাথরের আয়তন বাড়ার এই বৈশিষ্টটিকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা এই পাথর দিয়েই তৈরি করেন বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি।ফলে এই মূর্তি গুলি স্বাভাবিক প্রানীর মত চলাফেরা করে।
কিন্তু কথা হচ্ছে এমন ভৌতিক বা বৈজ্ঞানিক ঘটনার কারণ কী ?
এটা ভৌতিক নয়। তবে এই ঘটনার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে ভৌত বিজ্ঞান। রহস্য লুকিয়ে রয়েছে আণবিক গঠনে। বিজ্ঞান এই পাথরগুলির একটি শক্ত কোর থাকে। তার বাইরে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট-সমৃদ্ধ বেলেপাথরের মোটা আস্তরণ থাকে। এই পাথরের উপর বৃষ্টির জল পড়লেই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে যায়। বৃদ্ধি পায় আয়তনও। কয়েক মিলিমিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত বড়ো হতে পারে এই ধরনের পাথরের আয়তন।
তবে বৃষ্টির জলে শুধু আয়তন বৃদ্ধিই নয়, একা একা হাঁটাচলা করে স্থান পরিবর্তন করতে পারে ট্রোভান্ট। আসলে, জলের সংস্পর্শে এলে পুরো পাথরের বৃদ্ধি হয় না। বরং, তার বিভিন্ন খাঁজ থেকে জন্ম নেয় কিছু কিছু বাড়তি অংশ। ঠিক যেন ডাল-পালা মেলে ধরছে কোনো বৃক্ষ। এই ধরনের ‘অঙ্গ’-এর বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই স্থান পরিবর্তন করে ট্রোভান্ট।
অনেক ভূতাত্ত্বিকদের অনুমান, এই চলমান পাথর বা ট্রোভান্টের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ বছর আগে। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে বিশেষ ধরনের লাভা থেকে হয়ত তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ পাথর । তারপর ক্রমাগত বৃদ্ধির বৈশিষ্ট পেয়েছে সেগুলি। কখনো আবার খণ্ডিত হয়ে জন্ম দিয়েছে ছোটো প্রস্তরখণ্ডের।
আবার গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এই পাথর আসলে ভিনগ্রহী।তবে এই বিশ্বাসকেও উড়িয়ে দেওয়া চলে না। কারণ, কেবলমাত্র রোমানিয়ার এই গ্রাম ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এই পাথরকে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি ।